একসময় মানুষ গুনত পাথর আর কাঠের দণ্ডে। আজ সেই মানুষই তৈরি করেছে এমন এক যন্ত্র, যা মুহূর্তে কোটি কোটি হিসাব করতে পারে কম্পিউটার। এটি মানুষের মেধা, কৌতূহল ও অগ্রগতির এক মহৎ প্রতীক।
প্রাচীন যুগ: আবাকাস থেকে পাসকাল পর্যন্ত
খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সালে চীনে তৈরি হয় আবাকাস (Abacus), যা গণনার ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসেবে পরিচিত।
এরপর সময়ের সঙ্গে মানুষ তৈরি করেছে আরও উন্নত গণনাযন্ত্র
- ১৬১৭ সালে জন ন্যাপিয়ার (John Napier) তৈরি করেন Napier’s Bones, যা গুণ ও ভাগে সাহায্য করত।
- ১৬৪২ সালে ব্লেজ পাসকাল (Blaise Pascal) আবিষ্কার করেন Pascal Calculator, যা যোগ-বিয়োগ করতে পারত।
- ১৬৭১ সালে গটফ্রিড লেইবনিজ (Gottfried Leibniz) তৈরি করেন এমন একটি ক্যালকুলেটর, যা গুণ, ভাগ, এমনকি ঘাত নির্ণয়ও করতে পারত। এই আবিষ্কারগুলোই আধুনিক কম্পিউটারের প্রথম ধাপ তৈরি করে দেয়।
চার্লস ব্যাবেজ: আধুনিক কম্পিউটারের জনক
১৮২২ সালে চার্লস ব্যাবেজ (Charles Babbage) তৈরি করেন Difference Engine, আর ১৮৩৩ সালে ডিজাইন করেন Analytical Engine।
এই মেশিন ছিল আধুনিক কম্পিউটারের মূল ভিত্তি। তাঁর সহকারী এডা লাভলেস (Ada Lovelace) এই মেশিনের জন্য প্রথম প্রোগ্রাম লেখেন। তাই তাঁকেই বলা হয় বিশ্বের প্রথম প্রোগ্রামার।
কম্পিউটারের পাঁচ যুগের রোমাঞ্চকর যাত্রা
১ম যুগ (1940–1956): Vacuum Tube
এই সময় তৈরি হয় প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটার ENIAC ও UNIVAC। এগুলো বিশাল আকারের, প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ করত এবং প্রচণ্ড গরম হতো।
২য় যুগ (1956–1963): Transistor
ট্রানজিস্টর আবিষ্কারের ফলে কম্পিউটার ছোট, দ্রুত ও শক্তি সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে।
৩য় যুগ (1964–1971): Integrated Circuit (IC)
ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বা চিপ ব্যবহারের ফলে কম্পিউটার আরও দ্রুত, নির্ভরযোগ্য ও কমপ্যাক্ট হয়।
৪র্থ যুগ (1971–বর্তমান): Microprocessor
Intel 4004 মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি হওয়ার পর শুরু হয় পার্সোনাল কম্পিউটারের যুগ। এই সময় থেকেই Apple, IBM, Microsoft বিশ্ব প্রযুক্তির নেতৃত্ব নেয়।
৫ম যুগ (বর্তমান ও ভবিষ্যৎ): Artificial Intelligence (AI)
এখন কম্পিউটার শুধু হিসাব করে না ভাবতেও পারে, শিখতেও পারে।
Artificial Intelligence (AI), Robotics, Machine Learning আজ মানুষের জীবনযাত্রা ও কাজের ধরন বদলে দিচ্ছে।
আরো পড়ুন: সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য নতুন চিকিৎসা প্যাকেজ রেট ঘোষণা
কম্পিউটার: মানুষের অগ্রগতির প্রতীক
আজ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং, যোগাযোগ, এমনকি মহাকাশ গবেষণায়ও কম্পিউটার অপরিহার্য।
এটি শুধু প্রযুক্তির নয়, মানব সভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসের অংশ।
উপসংহার
একটি আবাকাসের পুঁতি থেকে আজকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পর্যন্ত, এটি মানুষের অদম্য কৌতূহল ও সৃষ্টিশীলতার কাহিনি। যে মানুষ একদিন পাথরে গুনত, আজ সে তৈরি করেছে এমন এক যন্ত্র, যা তার চেয়েও দ্রুত ভাবে, শেখে, এবং বদলে দিচ্ছে গোটা পৃথিবী।