বিশ্বজুড়ে সাহিত্যপ্রেমীদের মুখে আজ একটাই নাম লাস্লো ক্রাসনাহর্কাই (László Krasznahorkai)
হাঙ্গেরির এই বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক অর্জন করেছেন ২০২৫ সালের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার।
তার লেখার মূল শক্তি মানবমনের অদৃশ্য জগৎ, সমাজের জটিল বাস্তবতা, এবং নীরবতার ভেতরে লুকিয়ে থাকা গভীর অনুভব। তার কলমে জীবনের স্থবিরতা হয়ে ওঠে এক চলমান চিন্তার স্রোত, যা পাঠককে দীর্ঘক্ষণ ভাবতে বাধ্য করে।
জীবন ও সাহিত্যযাত্রা লাস্লো ক্রাসনাহর্কাই
লাস্লো ক্রাসনাহর্কাই জন্মগ্রহণ করেন ৫ জানুয়ারি ১৯৫৪ সালে, গিউলা (Gyula), হাঙ্গেরি শহরে।
ছোটবেলা থেকেই বই ও দর্শনের প্রতি তার অনুরাগ ছিল প্রবল। তিনি পড়াশোনা করেছেন Eotvos Loránd University, বুদাপেস্টে, যেখানে সাহিত্য ও ইতিহাস তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
তার প্রথম উপন্যাস “Satantango” (১৯৮৫) প্রকাশের পরই তিনি ইউরোপীয় সাহিত্যজগতে আলোড়ন তোলেন।
এই উপন্যাসে সমাজের ভেতরের ভাঙন, নৈতিক অবক্ষয়, এবং সময়ের একঘেয়েমি এক আশ্চর্য কাব্যিক ভঙ্গিতে ফুটে ওঠে। পরবর্তীতে উপন্যাসটি চলচ্চিত্রে রূপ নেয়, যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়।
এর পর থেকে একের পর এক সৃষ্টিতে তিনি প্রমাণ করেছেন যে সাহিত্য কেবল গল্প নয়, বরং এক মানসিক যাত্রা।
তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- The Melancholy of Resistance
- War and War
- Baron Wenckheim’s Homecoming
- Seiobo There Below
তার লেখার বৈশিষ্ট্য হলো গভীর চিন্তা, ধীর বর্ণনা, দার্শনিক অনুসন্ধান, এবং মানবসভ্যতার ভেতরের বিশৃঙ্খলাকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা।
কলকাতার উচ্ছ্বাস ও গর্ব
নোবেলজয়ের খবর ছড়িয়ে পড়তেই কলকাতার সাহিত্যমহল আনন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে।
সাহিত্য উৎসব, ক্যাফে আড্ডা, বইয়ের দোকান সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন ক্রাসনাহর্কাই।
কলকাতার লেখক ও পাঠকেরা বলছেন, এই জয় কেবল হাঙ্গেরির নয়, গোটা বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমীদের জয়।
তিনি অতীতে ভারত সফরে এসে কলকাতার সংস্কৃতি, বইপ্রেম, ও মানবিকতার প্রশংসা করেছিলেন।
তাই এই শহর আজ যেন নিজেরই একজনকে পুরস্কার পাওয়া মানুষ হিসেবে উদ্যাপন করছে।
এক তরুণ সাহিত্যপ্রেমী বললেন
আজকের যুগে যখন সবাই তাড়াহুড়ো করে বাঁচতে চায়, ক্রাসনাহর্কাই আমাদের শেখান ধীর হয়ে ভাবতে
শব্দের ভেতরও নীরবতা থাকে, আর নীরবতার মধ্যেও এক গভীর জীবন স্পন্দন লুকিয়ে থাকে। লাস্লো ক্রাসনাহর্কাই প্রমাণ করেছেন সাহিত্য মানে সীমা নয়, সংযোগ; শব্দ নয়, অনুভব।