ভাষা নিয়ে দেশ। যে দেশের ভাষা বাংলা তাই বাংলাদেশ। বাংলা ভাষার যখন উৎপত্তি হয় তখন সে ভাষা আধুনিক বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বেশ খানিক দূর অব্দি প্রসারিত ছিল।
বাংলা ভাষা থেকে অব্যবহিতভাবে উৎপন্ন সেই প্রশ্নভাষা—অর্থাৎ প্রত্ন-বাংলা-অসমীয়া, প্রত্ন-মৈথিলী ও প্রত্ন-ওড়িয়া—তার ক্ষেত্রে ছিল আরও বিস্তৃর্ণ। তারও আগে এই অঞ্চলে যে ভাষা প্রচলিত ছিল সেই পূর্বী অবহটঠ, বাংলা-অসমিয়া-ওড়িয়ার মতো দক্ষিণ-পশ্চিম বিহারে প্রচলিত মগহী ও ভোজপুরি ভাষারও জননী। সে ভাষা পূর্বে কামরূপ থেকে পশ্চিমে কাশি পর্যন্ত প্রসারিত ছিল।
বঙ্গ নামটির অর্থ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন নামটির মূলে ছিল চীন-তিব্বতি গোষ্ঠীর কোন শব্দ। এরা শব্দটির ‘অং’ অংশের সঙ্গে গঙ্গা, হোয়াংহো, ইয়াংসিকিয়াং ইত্যাদি নদী নামের অংশের সমত্ব করে অনুমান করেছেন যে, শব্দটির আদি অর্থ ছিল জলাভূমি কারণ আড়াই তিন হাজার বছর আগে বাংলাদেশের বেশিরভাগ অংশই ছিল জলাভূমি ও জঙ্গল।
‘বঙ্গ’ শব্দ ঋকবেদে নেই। এটি সর্বপ্রথম পাওয়া যাচ্ছে ঐতরেয় আরণ্যক-এ। ঐতরেয় আরণ্যক-এ দেখা যায় যে তিনটি জাতি নষ্ট হয়ে গেছিল—বঙ্গ, বগধ, এবং চেরপাদ।
পণ্ডিতরা এখানে তিনটি অনার্য ভারতীয় জাতির নাম অনুমান করেছেন—বঙ্গ, বগধ এবং চেরপাদ। আমাদের দেশে অর্থাৎ ভারতবর্ষে অধিকাংশ দেশনাম, জাতিনাম থেকে এসেছে, সুতরাং ‘বঙ্গ’ জাতির অধ্যুষিত অঞ্চল বঙ্গদেশ অথবা বঙ্গে—জলময় দেশে—যারা পূর্বে থেকে বাস করত তারা ‘বঙ্গ’ এবং তারপরে তাদের নিবাস ভূমি ‘বঙ্গ’ দেশ। ‘বঙ্গ’ শব্দ থেকে বঙ্গাল শব্দটি পাওয়া যাচ্ছে একাদশ দ্বাদশ শতাব্দী থেকে।
দ্বাদশ শতাব্দীর এক অনুশাসনে বঙ্গাল-বল অর্থাৎ বাঙাল রাজার সৈন্য কর্তৃক নালন্দার একটি বিহার ধ্বংসের উল্লেখ আছে। এই সময়ে এক কবিও ‘বঙ্গাল’ নামে পরিচিত ছিলেন। অনেকে মনে করেন যে ‘বঙ্গাল’ শব্দটি সংস্কৃত প্রত্যয় যোগে গঠিত। রাখাল, গোপাল, ঘোষাল, সাঁওতাল ইত্যাদির মতো ‘বঙ্গাল’ শব্দও সমাস নিষ্পন্ন পদ কিন্তু এসব ব্যাখ্যাই অনুমানভিত্তিক।