হরমনপ্রীতের হাত ধরে ইতিহাস গড়ল ভারত, বদলে গেল মহিলা ক্রিকেটের ভাগ্য

Harmanpreet Kaur

Harmanpreet Kaur

গত কয়েক দিন ধরে দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের মুখে একটাই নাম হরমনপ্রীত কৌর। ভারতের মহিলা দল যে ভাবে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতল, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। বলা হচ্ছে, এই জয় শুধু একটা ট্রফি নয়, মহিলা ক্রিকেটের ভবিষ্যতের নতুন দুয়ার খুলে দিল।

‘দুয়োরানি’ থেকে ‘রানী’ ১২ বছরের পথচলা

এক সময় মহিলা ক্রিকেট ছিল অবহেলিত। ২০১৩ সালের বিশ্বকাপের কথা মনে আছে? তখন ভারতই আয়োজক দেশ, কিন্তু বিসিসিআই মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম থেকে ম্যাচ সরিয়ে দেয়, কারণ সেখানে রঞ্জি ফাইনাল খেলতে চেয়েছিল রাজ্য দল! সেদিন মহিলা ক্রিকেট ছিল ‘দুয়োরানি’। গ্যালারিতে দর্শকও ছিল হাতেগোনা।

কিন্তু ২০১৭ সালে হরমনপ্রীতের ১৭১ রানের ইনিংস বদলে দেয় সব হিসেব। সেই ম্যাচেই ভারত পৌঁছে যায় ফাইনালে। যদিও শেষ পর্যন্ত হারতে হয়, কিন্তু জিতে যায় মহিলা ক্রিকেট। সেই থেকে শুরু হয় উত্থানের গল্প। ২০২০ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে মেলবোর্নে ৮৬ হাজারেরও বেশি দর্শক মহিলাদের ম্যাচ দেখতে মাঠে এসেছিলেন। সেদিনও ভারত হারে, কিন্তু বিশ্ব জানে মহিলাদের ক্রিকেটও সমান আকর্ষণীয়।

মহিলা আইপিএল সমান পারিশ্রমিকের যুগ

এই সাফল্যই পথ দেখায় ২০২৩ সালের মহিলা আইপিএল শুরু করার। পুরুষদের মতোই নিলাম, স্পনসরশিপ, আর বড় বড় কর্পোরেট চুক্তি। বিসিসিআই-ও ঘোষণা করে, আন্তর্জাতিক ম্যাচে পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেটারদের সমান ম্যাচ ফি দেওয়া হবে। সত্যিই, এটা ছিল ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।

আরো পড়ুন: এক বছর আগেও ছিলেন দলের বাইরে

নতুন পোস্টার বয় নয়, এখন পোস্টার গার্লস!

আজ বিরাট কোহলি বা রোহিত শর্মা নয়, বিলবোর্ডে দেখা যায় স্মৃতি মন্ধানা, হরমনপ্রীত কৌর আর জেমাইমা রদ্রিগেসকে। নাসের হুসেন পর্যন্ত অবাক হয়ে বলছেন, “মুম্বই বিমানবন্দরের বিলবোর্ডে এমন বড় মহিলা ক্রিকেট বিজ্ঞাপন আগে কখনও দেখিনি।”

বাংলাদেশের এক তরুণী পেসার মারুফা আখতার ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, “জেমিদিদি, তোমার ইনিংস আমাকে নতুন করে লড়াই করতে শিখিয়েছে।” এটাই আসল প্রভাব ক্রিকেট মাঠের বাইরেও লাখো মেয়েকে অনুপ্রাণিত করছে এই দল।

যে টুর্নামেন্ট একসময় দেখত সাড়ে ছ’শো মানুষ, সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে এবার ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে ছিল সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দর্শক। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছেলেমেয়েরা নাচছে, পুরুষেরা গর্বভরে মহিলা ক্রিকেটারের নাম লেখা জার্সি পরে আছে।

৪২ বছরের ইতিহাসে এই জয় শুধু ট্রফি নয় ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের আত্মনির্ভরতার প্রতীক। বলা যায়, এখন আর মহিলা ক্রিকেট ‘দুয়োরানি’ নয়, সে সত্যিকারের ‘রানী’।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *