রাজকোটের আগুনে ঝলসে গেল বাঙালির স্বপ্ন

fire accident Rajkot Bengali jeweler

fire accident Rajkot Bengali jeweler

গুজরাটের রাজকোট স্বপ্নের শহর, কাজের আশায় যেখানকার কারখানায় দেশের নানা প্রান্তের মানুষ পরিশ্রম করে সংসার চালান। কিন্তু সেই স্বপ্নই এক মুহূর্তে দুঃস্বপ্নে পরিণত হল এক বাঙালি স্বর্ণকারের পরিবারের জন্য।

সোমবার সকালে রাজকোটের এক গয়না পালিশের ইউনিটে ঘটে যায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। মুহূর্তের মধ্যে আগুনে পুড়ে প্রাণ হারান পশ্চিমবঙ্গের এক দক্ষ সোনার কারিগর।

কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?

সূত্রের খবর, ঘটনার সময় কারখানায় চলছিল নিয়মিত কাজ। হঠাৎ একটি পালিশ মেশিন থেকে স্ফুলিঙ্গ (sparks) ছিটকে পড়ে পাশে রাখা LPG সিলিন্ডারের ওপর। মুহূর্তের মধ্যেই সিলিন্ডারে আগুন ধরে যায় এবং গোটা ঘর জ্বলে ওঠে লেলিহান শিখায়। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, চিৎকার, ধোঁয়া আর বিশৃঙ্খলা।

দুর্ভাগ্যবশত, তখন ভেতরে কাজ করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ওই স্বর্ণকারটি আগুনের কবল থেকে আর বেরোতে পারেননি। এক নিমেষে থেমে গেল এক পরিশ্রমী জীবনের যাত্রা।

ধোঁয়ার ঘেরাটোপে থেমে গেল এক স্বপ্ন

পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষ ছিলেন তিনি।
গ্রামের বাড়িতে তাঁর পরিবার এখন শোকে স্তব্ধ।
পরিজনরা কাঁদতে কাঁদতে বলছেন:

“রোজগারের আশায় গিয়েছিলেন রাজকোটে। বলেছিলেন, ‘আরও কিছুদিন কাজ করে ফিরে আসব।’ কিন্তু আর ফেরা হল না…”

যে মানুষ প্রতিদিন সোনায় দীপ্তি আনতেন, আজ তাঁর জীবনই নিভে গেল আগুনে।

দমকলের বীরত্ব

অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় দমকল বাহিনী।
প্রায় এক ঘণ্টার লড়াইয়ের পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
দমকল সূত্রে জানা গেছে:

LPG সিলিন্ডারের বিস্ফোরণেই আগুন ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
ইউনিটটিতে যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না বলেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতটা বেশি হয়েছে।
অনেক শ্রমিক সামান্য অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন

এই দুর্ঘটনা ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল:-
রাজকোটসহ দেশের বহু ছোট কারখানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম অভাব রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুরক্ষা সরঞ্জাম না থাকা, ফায়ার সেফটি গাইডলাইন মানা না হওয়া, আর পুরনো যন্ত্রপাতির ব্যবহার এগুলিই এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার মূল কারণ।

এখন শ্রম দফতর ও স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়াই একমাত্র উপায়।

বাংলার মাটিতে ফিরছে নিথর দেহ

রাজকোট প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মৃত স্বর্ণকারের দেহ পাঠানো হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে।
গ্রামের মানুষ এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না
যে ছেলে সোনার কাজ করে সংসার চালাত, সে-ই আজ আগুনে পুড়ে নিভে গেল।

আরো পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ অভিযান

এক প্রতিবেশীর গলায় অসহায় বেদনা

“ও শুধু গয়না পালিশ করত না, সংসারও পালিশ করত। এখন সংসারটাই নিভে গেল…”

শেষ কথা

একটি অগ্নিকাণ্ড কেবল একজন মানুষের জীবনই কেড়ে নিল না ভেঙে দিল একটি পুরো পরিবার, ছিন্ন করল এক স্বপ্ন।
রাজকোটের এই ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলছে
শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে?
আর কত প্রাণের বিনিময়ে আমরা শিখব ‘নিরাপত্তাই সবার আগে’?

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *