পিরিয়ড কোনো লজ্জা নয় রক্ত নয়, এটা এক নারীর শক্তির রঙ!

period

period

মেয়েরা হাসে, কাঁদে, স্বপ্ন দেখে, আর ঠিক সেভাবেই প্রতি মাসে একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যায়, যার নাম “পিরিয়ড”। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজও আমাদের সমাজের অনেক মানুষ এটাকে অশুচি, লজ্জার, কিংবা নিষিদ্ধ কিছু বলে মনে করে। কেউ ফিসফিস করে বলে, “ওর ওই সময় চলছে।”

কেউ আবার দোকানে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে গিয়ে কাগজে মুড়ে লুকিয়ে নিয়ে আসে যেন এটা কোনো অপরাধ! কিন্তু প্রশ্ন একটাই প্রকৃতির দেওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার জন্য কেন একজন মেয়ে লজ্জা পাবে?

পিরিয়ড মানেই দুর্বলতা নয়, এটা এক প্রকার শক্তি!

প্রতিমাসে একজন নারী ব্যথা, রক্তপাত, মানসিক চাপ সব কিছুর সঙ্গে যুদ্ধ করে দিনযাপন করে। তবু সে স্কুলে যায়, অফিসে যায়, ঘরের কাজ করে, সন্তান সামলায়, স্বপ্ন বোনে। এটাই তো অসাধারণ শক্তির নিদর্শন! তুমি ভাবো, শরীরের ভেতর এত পরিবর্তন, এত ক্লান্তি তবুও একজন নারী হাসি মুখে জীবন চালিয়ে যায়। এটাই তার সাহস, তার বেঁচে থাকার গল্প। পিরিয়ড দুর্বলতা নয়, এটা একটা মহান সহনশীলতার প্রতীক!

সমাজের ভুল ধারণা:

আমাদের সমাজের একটা অংশ এখনো ভাবে “পিরিয়ড হলে মেয়ে রান্নাঘরে যাবে না,” “পূজা করবে না,”“ওকে দূরে রাখো, ও অশুচি।”

কিন্তু একটু ভাবো তো যে রক্ত দিয়ে এক নতুন প্রাণ তৈরি হয়, সেই রক্ত কি কখনও অশুচি হতে পারে?

এই চিন্তাগুলো এসেছে অজ্ঞতা থেকে। বিজ্ঞান আজ প্রমাণ করেছে পিরিয়ড কোনো রোগ নয়, এটা নারীর প্রজনন চক্রের স্বাভাবিক অংশ। তবুও আমরা কুসংস্কারের চাদর মুড়ে রাখি সত্যটাকে।

আরো পড়ুন: ক্যানসার রুখতে এলো পশ্চিমবঙ্গের নতুন AI-চালিত মোবাইল অ্যাপ

মেয়েরা কেন চুপ করে থাকবে?

অনেক মেয়ে এখনো স্কুলে বা কলেজে পিরিয়ড নিয়ে কথা বলতে লজ্জা পায়, শিক্ষকরাও অনেক সময় এ বিষয়টা এড়িয়ে যান। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই লজ্জার দেওয়াল ভাঙতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত মেয়েরা নিজেদের নিয়ে দ্বিধায় ভুগবে।

সময় এসেছে বলার “হ্যাঁ, আমি একজন মেয়ে, আমার পিরিয়ড হয়, এবং এতে কোনো লজ্জার কিছু নেই!” যেদিন সমাজে একটা মেয়ে খোলাখুলি দোকানে গিয়ে ন্যাপকিন চাইতে পারবে, যেদিন ছেলেরা বলবে, “এই তো স্বাভাবিক জিনিস,” সেদিনই আমরা সত্যিকারের সচেতন সমাজের পথে হাঁটব।

পিরিয়ড মানেই জীবন

এই রক্তই তো একদিন নতুন প্রাণের সূচনা করে। এই প্রক্রিয়া না থাকলে পৃথিবীতে কেউই জন্ম নিত না। তাহলে কেন এই রক্তকে ঘৃণা করা হবে? বরং এই রক্তের প্রতিটি ফোঁটা মায়ের ভালোবাসা, সহ্যশক্তি আর সৃষ্টির প্রতীক।

আসুন বদলাই দৃষ্টিভঙ্গি

মেয়েদের পিরিয়ডে সহানুভূতি দাও, অবহেলা নয়। তাদের আরামদায়ক পরিবেশ দাও, লজ্জা নয়। প্রশ্ন করলে উত্তর দাও, গোপনীয়তা নয়। আর সবচেয়ে জরুরি “পিরিয়ড” শব্দটা স্বাভাবিকভাবে উচ্চারণ করো। যেদিন স্কুলে, পরিবারে, অফিসে সবাই স্বাভাবিকভাবে এই শব্দটা ব্যবহার করবে, সেদিনই বদলে যাবে সমাজের মানসিকতা।

শেষ কথা

পিরিয়ড কোনো লজ্জার গল্প নয়, এটা এক জীবনের বাস্তব অধ্যায়। যেখানে ব্যথার সঙ্গে জড়িয়ে আছে গর্ব, সহ্যশক্তি আর সৃষ্টির আনন্দ। আজ যদি আমরা মেয়েদের এই শক্তিটাকে বুঝি, তাহলে আগামীর প্রজন্ম আর কখনো বলবে না “ওর ওই সময় চলছে, ও দূরে থাকুক,” বরং বলবে “ওর সময় চলছে, ওর যত্ন নেওয়া দরকার।”

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *