গম্ভীরের পরামর্শেই কি বাদ রোহিত শর্মা? নতুন অধিনায়ক শুভমন গিল কে নিয়ে তুমুল আলোচনা

গম্ভীরের পরামর্শেই কি বাদ রোহিত শর্মা

গম্ভীরের পরামর্শেই কি বাদ রোহিত শর্মা

শেষ পর্যন্ত যা হওয়ার তাই হলো একদিনের ক্রিকেটে নেতৃত্ব হারালেন রোহিত শর্মা। ভারতীয় ক্রিকেটে বড় রদবদল ঘটিয়ে নির্বাচকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আসন্ন তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দলের অধিনায়ক হবেন না রোহিত, সেই দায়িত্ব যাবে তরুণ শুভমন গিলের হাতে।

রোহিত থাকবেন দলে, কিন্তু আর নেতৃত্ব দেবেন না। এই ঘোষণা হতেই ক্রিকেটমহলে যেন ঝড় বয়ে গেল। কেন এমন সিদ্ধান্ত? চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ী অধিনায়ককে সরানোর কারণ কী? চলুন পুরো ঘটনাটা গুছিয়ে দেখি।

নির্বাচকদের ব্যাখ্যা: তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক রাখা সম্ভব নয়

দল ঘোষণার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, “তিন ফরম্যাটে তিন জন আলাদা অধিনায়ক রাখা দলের জন্য ভালো নয়। এতে কোচের কাজও কঠিন হয়ে যায়।”

এখানেই বোঝা গেল আসল কারণটা। এখন টেস্ট দলে নেতৃত্বে শুভমন গিল, টি-টোয়েন্টি দলে সূর্যকুমার যাদব। তাই বোর্ড চাইছে, তিন ফরম্যাটেই যেন নেতৃত্বের একটা ধারাবাহিকতা থাকে। সেই ধারায় ওয়ানডের নেতৃত্বও শুভমনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। যদিও আগরকর সরাসরি বলেননি, কিন্তু ক্রিকেট মহলে প্রায় সবাই জানে এ সিদ্ধান্তের পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে ভারতের নতুন কোচ গৌতম গম্ভীরের।

গম্ভীরের চিন্তাভাবনা: এক ছাতার নিচে এক দিকনির্দেশ

বোঝাই যাচ্ছে, গম্ভীর চান তিন ফরম্যাটে এক ছাতার নিচে নেতৃত্ব।
তিনি নাকি বোর্ডকে বলেছেন, “একটা স্পষ্ট দিকনির্দেশ থাকা দরকার। টেস্ট, ওয়ানডে আর টি২০ তিন জায়গায় তিন রকম অধিনায়ক থাকলে দলের চরিত্র ঠিক গড়ে ওঠে না।”

বোর্ড সেই মতামতই মেনে নিয়েছে। অর্থাৎ এই সিদ্ধান্ত শুধু এখনকার জন্য নয়, বরং আগামী কয়েক বছরের পরিকল্পনা মাথায় রেখেই নেওয়া হয়েছে।

পরের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু এখন থেকেই

প্রধান নির্বাচক আগরকর আরও বলেন, “আমরা পরের ওয়ানডে বিশ্বকাপের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন এক দিনের ক্রিকেট খুব বেশি খেলা হয় না। দু’বছর সময় মনে হলেও বাস্তবে খুব কম ম্যাচ আছে হাতে। তাই শুভমনকে এখন থেকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে ও দলকে গুছিয়ে নিতে পারে।”

যেমন ২০২৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপের দু’বছর আগে সূর্যকুমার যাদবকে অধিনায়ক করা হয়েছিল, ঠিক তেমনই শুভমনকেও দেওয়া হচ্ছে সময় ও দায়িত্ব দুটোই। বোর্ড চাইছে, সে নিজের দল তৈরি করে ফেলুক, নিজের নেতৃত্বে একটা নতুন ধারার সূচনা করুক।

রোহিতকে জানিয়েই সিদ্ধান্ত

অনেকেই ভাবছেন, রোহিতকে কি না জানিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে?
এ ব্যাপারে আগরকর বলেন, “রোহিতের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমরা ওকে জানিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এমন নয় যে হঠাৎ করেই ওর মাথা থেকে দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”

বোর্ডের মতে, রোহিত একজন সিনিয়র ক্রিকেটার, দলের অন্যতম স্তম্ভ। তাই তাকে না জানিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
তবে গুঞ্জন আছে, রোহিত এই পরিবর্তনে খুব একটা খুশি নন যদিও প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পরই এমন সিদ্ধান্ত বিতর্ক উসকে দিল

বিতর্কের শুরু এখানেই।
যে অধিনায়ক দেশের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতিয়েছেন, যিনি বছরের পর বছর স্থিতিশীল নেতৃত্ব দিয়েছেন তাকে সরিয়ে দেওয়া মানে তো প্রশ্নের জন্ম দেওয়া।

অনেকে বলছেন, এটা নিছক “পরিকল্পনা” নয়, বরং নতুন কোচের ক্ষমতার প্রদর্শন। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, বোর্ড এখন থেকেই ভবিষ্যতের জন্য নেতৃত্ব বদলে নিচ্ছে, যাতে রোহিত-কোহলি যুগের পর সরাসরি নতুন প্রজন্ম দায়িত্ব নিতে পারে।

রোহিত-কোহলি যুগের অবসান কি শুরু হলো?

সবাই এখন এই প্রশ্নটাই করছে এ কি রোহিত-কোহলির শেষ অধ্যায়ের শুরু?
আগরকর যদিও বলেছেন, “ওরা দু’জনেই ফিট। ফিটনেস পরীক্ষায় পাশ করেছে। তবে ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলবে কি না, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়।”

এই উত্তর থেকেই আরও জোরালো হচ্ছে জল্পনা।
কারণ বোর্ড ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বললেও, বাস্তবে দলের রূপান্তরের প্রস্তুতি যেন শুরু হয়ে গেছে। অনেকের মতে, এটা ধীরে ধীরে নতুন ভারতের ক্রিকেট দলের চেহারা তৈরি করার প্রথম ধাপ।

ক্রিকেট মহলে প্রতিক্রিয়া

প্রাক্তন ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সমর্থক সবাই এই সিদ্ধান্তে অবাক।
মনোজ তিওয়ারি বলেছেন, “রোহিতকে এমনভাবে সরিয়ে দেওয়া নিঃসন্দেহে অসম্মানজনক। এটা বোর্ডের একতরফা সিদ্ধান্ত।”
আবার অনেক বিশ্লেষক বলছেন, “বোর্ড আসলে ভবিষ্যতের কথা ভাবছে। রোহিতের বয়স ৩৮ হতে চলেছে। এখনই নেতৃত্ব হস্তান্তর করলে নতুন অধিনায়ক সময় পাবে নিজেকে গড়ে তোলার।”

সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রতিক্রিয়ার ঝড়। কেউ বলছেন, “এটা রোহিতের প্রতি অন্যায়”, আবার কেউ লিখছেন, “সময় হয়েছে নতুন যুগ শুরু করার।”

বোর্ডের পরিকল্পনা স্পষ্ট

সব মিলিয়ে বোর্ডের পরিকল্পনা পরিষ্কার দীর্ঘমেয়াদী নেতৃত্ব স্থায়িত্ব।
তারা এখনই আগামী বিশ্বকাপ ও আসন্ন বড় সিরিজগুলোর জন্য রোডম্যাপ তৈরি করছে।
রোহিত, বিরাট, বুমরাহ এই প্রজন্ম ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছেন নতুনদের জন্য। সেই ফাঁকটা পূরণ করতেই শুভমন-সূর্যকুমার-শুভমানী ধারা গড়ে তুলছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।

ব্যক্তিগত দিক থেকেও রোহিতের সময় কঠিন

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর থেকেই রোহিত কিছুটা চাপে ছিলেন। একদিকে নতুন কোচের আগমন, অন্যদিকে বোর্ডের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সব মিলিয়ে তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিলই।
তাছাড়া রোহিত নিজেও টেস্ট ও টি২০ তে বড় ভূমিকা রাখছেন না, ফলে নেতৃত্ব বদলটা অনেকের কাছেই সময়ের ব্যাপার ছিল।

তবু, যেভাবে ঘোষণা করা হলো তা অনেককেই অবাক করেছে। কারণ, কেউ ভাবেননি এত দ্রুত এই অধ্যায় শেষ হয়ে যাবে।

বিশ্লেষণ: এই সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিসঙ্গত?

নেতৃত্ব বদলের সিদ্ধান্তে মতভেদ থাকতেই পারে।
তবে যুক্তিগুলো যদি বিশ্লেষণ করা হয়, দেখা যায় কিছুটা বাস্তবতা আছে:

  • তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক থাকলে সমন্বয় কঠিন হয়।
  • রোহিতের বয়স ও বিশ্রামের প্রয়োজন বোর্ডের চিন্তায় ছিল।
  • ভবিষ্যতের নেতৃত্বের প্রস্তুতি এখন থেকেই দরকার।

তবু, সময় আর উপায় এই দুটি জায়গাতেই বোর্ডের সিদ্ধান্তে বিতর্কের সুযোগ আছে। অনেকেই মনে করছেন, রোহিতের প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল পদ্ধতিতে দায়িত্ব হস্তান্তর করা যেত।

সামনে কী অপেক্ষা করছে?

ভারতীয় ক্রিকেট এখন এক রূপান্তরের সময় পার করছে।
শুভমন গিল নতুন নেতৃত্বে কেমন করেন, সেটাই ঠিক করে দেবে বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কি না।
অন্যদিকে, রোহিত শর্মা কীভাবে এই অধ্যায়ের পর নিজেকে মানিয়ে নেন, সেটাও দেখার। তিনি যদি খেলোয়াড় হিসেবে একই ধারায় পারফর্ম করে যান, তাহলে তাঁকে বাদ দেওয়া সহজ হবে না।

একই সঙ্গে নজর থাকবে বিরাট কোহলির দিকেও বোর্ড কি তাঁকেও ধীরে ধীরে একই পথে নিয়ে যাবে?

শেষ কথা

রোহিত শর্মাকে ওয়ানডে অধিনায়ক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া নিছক একটা ক্রিকেট সিদ্ধান্ত নয় এটা এক যুগের শেষ আর নতুন যুগের শুরু।
গম্ভীর-আগরকর-বোর্ডের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারতীয় ক্রিকেট আসলে ভবিষ্যতের দল গড়ার পথে হাঁটছে।

তবে যতই যুক্তি থাক, হৃদয়ের দিক থেকে অনেক সমর্থকেরই এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
কারণ রোহিত শুধু একজন অধিনায়ক নন তিনি ছিলেন একজন নেতা, যিনি শান্ত মাথায় ভারতীয় দলকে স্থিতি ও সাফল্য এনে দিয়েছেন।

এখন দেখা যাক, শুভমন গিল সেই আসন কতটা দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে পারেন, আর রোহিত শর্মা কীভাবে নিজের উত্তরাধিকারকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় জানান।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *